খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
বিহুল উপকারি পাঁচ ধরণের খেজুর:
প্রকৃতপক্ষে সকল জাতের খেজুরেই সকল ধরনের পুষ্টি বিদ্যমান। তবে এখানে যে পাঁচেটি খেজুরের কথা বলা হবে সেইগুলো খুবই জনপ্রিয়। সবচেয়ে ভালো উপকারিতা পাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট ধরনের খেজুর খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে আপনার চাহিদা ও স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর। তবে, বাজারে প্রচলিত কিছু জনপ্রিয় খেজুরের ধরন এবং তাদের স্বতন্ত্র উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারেন:
১. আজওয়া খেজুর:
- উৎপত্তি: সৌদি আরব
- বৈশিষ্ট্য: কালচে-বাদামী রঙ, আকারে ছোট, নরম ও মিষ্টি
উপকারিতা:
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
- রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে
- হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
২. খেজুর:
- উৎপত্তি: বাংলাদেশ, ভারত
- বৈশিষ্ট্য: হালকা বাদামী রঙ, আকারে বড়, শক্ত ও মিষ্টি
উপকারিতা:
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
- ব্রেন ফাংশন উন্নত করে
- ত্বক ও চুলের জন্য ভালো
৩. খেসুর:
- উৎপত্তি: বাংলাদেশ
- বৈশিষ্ট্য: কালচে-বাদামী রঙ, আকারে ছোট, শক্ত ও কম মিষ্টি
উপকারিতা:
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
৪. মেডজুল খেজুর:
- উৎপত্তি: মরক্কো
- বৈশিষ্ট্য: বাদামী-কালচে রঙ, আকারে বড়, শক্ত ও খুব মিষ্টি
উপকারিতা:
- শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য উপকারী
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে
৫. রুটি খেজুর:
- উৎপত্তি: ইরান
- বৈশিষ্ট্য: কালচে-বাদামী রঙ, আকারে ছোট, শক্ত ও শুকনো
উপকারিতা:
- দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো
খেজুরের পুষ্টিগুণ:
খেুজরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজসহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। নিচে কয়েকটি পুষ্টি উপাদান সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
- কার্বোহাইড্রেট: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শরীরের প্রধান শক্তির উৎস।
- প্রোটিন: খেজুরে প্রোটিন থাকে যা শরীরের টিস্যু গঠনে সাহায্য করে।
- ফাইবার: খেজুরে ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন: খেজুরে ভিটামিন বি1, বি2, বি3, বি5, বি6, সি থাকে যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- খনিজ: খেজুরে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন থাকে যা শরীরের জন্য ভালো।
খেজুরের শারীরিক উপকারিতা:
আমরা খেজুরের পুষ্টিগুণ থেকে যে সকল তথ্য পেলাম সেখান থেকেই বুঝতে পারি কি ধরনের শারীরিক উপকারিতা রয়েছে।
- দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো।
- রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য উপকারী।
খেজুর খাওয়ার ধর্মীয় গুরুত্ব:
খেজুর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হাদিস বর্ণিত রয়েছে। তার মধ্যে বহুল গুরুত্বপূর্ণ তিনটি হাদিস রয়েছে। যা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
- "যে ব্যক্তি খেজুর দিয়ে ইফতার করবে, তার জন্য রয়েছে একটি পূর্ণ সওয়াব।" (তিরমিযী)
- "যে ব্যক্তি রমজান মাসে খেজুর খাবে, সে জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে।" (ইবনে মাজাহ)
- "রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইফতারের সময় খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।" (বুখারী ও মুসলিম)
তাছাড়া খেজুরকে জান্নাতের ফল বলা হয়। এবং খেজুর দান করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় যা ইসলামের অনেক হাদিসে রয়েছে।খেজুর খাওয়ার অনেক ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। এটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং ধর্মীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই রমজান মাসে নিয়মিত ইফতারে খেজুর খাওয়া উচিত।
ইফতারে খেজুর খাওয়ার নিয়ম:
- ইফতারের সময় অল্প পরিমাণে (৩-৫টি) খেজুর দিয়ে শুরু করা উচিত।
- খেজুর পানিতে ভিজিয়ে খেলে তা আরও বেশি উপকারী।
- খেজুরের সাথে দুধ, দই, বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা:
খেজুরে এমন একটি খাবার যা খেলে পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে। তবে অবশ্যই সঠিক পরিমানে খেজুর খেতে হবে। খেজুরের ভিতরে যে সকল পুষ্টি উপাদান আছে তা যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।এই উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ও প্রাকৃতিক মিষ্টি ধারক।
- প্রোটিন: খেজুরের ভিতরে যে প্রোটিন থাকে তা যৌন হরমোন তৈরি করে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোনো ব্যক্তি যদি নিয়মিত খেজুর খায় তাহলে তার যৌন হরমোন বৃদ্ধি পাবে এবং যৌনের সমস্যা সমাধান হবে।
- ভিটামিন: খেজুরে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি রয়েছে, যা যৌন ক্ষমতা ও স্বাস্থ্যকে উন্নত করে
- মিনারেলস: খেজুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি মিনারেলসের উৎস পাওয়া যায়। এগুলি যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- প্রাকৃতিক মিষ্টি ধারক: খেজুরে রয়েছে গ্লকোজ, ফ্রাক্টোস, ও স্রুকোজ এর উৎস। এগুলি যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও, খেজুরে প্রাকৃতিক ফিটোহরমোন ও এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা যৌন স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে মনে রাখতে হবে জটিল যৌন সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা:
সকালে খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং সকালের নাস্তার জন্য একটি ভালো বিকল্প। নিয়মিত সকালে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
- খেজুর খেলে শরীরের ভেতর দ্রুত শক্তি সঞ্চয় হয়।
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে খেজুরের উপাদান সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- হাড় ও দাঁতের জন্য খেজুর খুবেই ভালো।
- রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- খেজুর খেলে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি হয়।
দুধ সাথে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা:
খেজুর খেলে এমনিতেই অনেক উপকার হয়। তবে খেজুরের সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ও ডি থাকে। অন্যদিকে খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ থাকে। মনে রাখতে হবে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে ৩টি থেকে ৫টি খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা:
আসলে অতিরিক্ত কোনো জিনিসই ভালো না। তাই খেয়াল রাখতে হবে অতি মাত্রায় খেজুর খাওয়া যাবে না। তাই পরিমিত পরিমাণে খেজুর খাওয়া উচিত।
- খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া উচিত নয়।
- খেজুরে ক্যালোরি বেশি থাকে। তাই অতিরিক্ত খেজুর খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- অতিরিক্ত খেজুর খেলে পেট খারাপ, গ্যাস, অম্বল হতে পারে।
- খেজুরে থাকা চিনি দাঁতের ক্ষয় করতে পারে।
- কিছু লোকের খেজুরের অ্যালার্জি থাকতে পারে তাই তাদের উচিত খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
শুকানো খেজুর অপেক্ষা কাঁচা খেজুরের উপকারিতা:
কাঁচা ও শুকানো খেজুর উভয়েরই আলাদা আলাদা উপকারিতা রয়েছে। আপনার চাহিদা ও স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর নির্ভর করে কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে তা আপনার জানতে হবে।
কাঁচা খেজুর:
- পুষ্টিগুণ: কাঁচা খেজুরে শুকানো খেজুরের চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকে।
- হজমশক্তি: কাঁচা খেজুর হজম করতে সহজ।
- রক্তচাপ: কাঁচা খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ওজন: কাঁচা খেজুর ওজন কমাতে সাহায্য করে।
শুকানো খেজুর:
- পুষ্টিগুণ: শুকানো খেজুরে কাঁচা খেজুরের চেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি, চিনি এবং ফাইবার থাকে।
- শক্তি: শুকানো খেজুর দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
- হাড়: শুকানো খেজুর হাড়ের জন্য ভালো।
- রক্তাল্পতা: শুকানো খেজুর রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
কোনটি ভালো:
- পুষ্টিগুণের দিক থেকে কাঁচা খেজুর শুকানো খেজুরের চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকে।
- হজমশক্তির দিক থেকে কাঁচা খেজুর সহজেই হজম করে।
- শক্তির দিক থেকে শুকানো খেজুর দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
- স্বাদের দিক থেকে কাঁচা খেজুরের স্বাদ শুকানো খেজুরের চেয়ে কম মিষ্টি।
পরিশেষে বলা যায়, খেজুর একটি খুব পুষ্টিশালী ও স্বাস্থ্যকর খাবার যা ইফতার বা যে কোন সময়ে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে অবশ্যই পরিমিত আকারে খেতে হবে।