স্তনে ক্যান্সারের ৭টি লক্ষণসমূহ যা আপনাকে জানতে হবে - 7 issues of breast cancer

আজকের এই ব্লগে আলোচনা করবো, স্তন ক্যান্সার চেনার উপায় নিয়ে। এই ক্যান্সারটাই আমাদের দেশের নারীদের সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। তাই এই ক্যান্সার নিয়ে আমাদের সবার জানা থাকা খুব প্রয়োজন। কোন লক্ষণগুলো দেখলেই স্তন ক্যান্সার চিনতে পারবেন সেগুলো এই ব্লগে একদম সহজ করে বুঝিয়ে দিবো। একটু মনযোগ দিয়ে ব্লগটি পড়ুন তাহলে কারো না কারো জীবন আপনার দ্বারা বেঁচে যেতে পারে।


কিছু ক্যান্সার আছে যেগুলোর ভালো কোন চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। ঐসব ক্যান্সার যখন ধরা পড়ে সেগুলো একেবারে সারিয়ে তোলার মতো কোন ওষুধ বা চিকিৎসা ডাক্তারের হাতে থাকে না। কিন্তু স্তন ক্যান্সার এমন কোনো ক্যান্সার না। স্তন ক্যান্সার যদি আগে ভাগে ধরে ধরে ফেলা যায় তাহলে এর খুব ভালো চিকিৎসা আছে। আর সময়মতো চিকিৎসা করালে স্তন ক্যান্সার সাধারণত একদম সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব। কিন্তু স্তন ক্যান্সার ধরতে যদি দেরি হয় তখন সেটা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ সময়মতো স্তন ক্যান্সার চিকিৎসা করতে পারলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

মূল কথায় আসি, কিভাবে আপনি স্তন ক্যান্সার চিনবেন? স্তনে বিশেষ কিছু পরিবর্তন দেখলে ক্যান্সারের কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে। সেগুলো কিকি? মোট সাতটি পরিবর্তনের বা লক্ষণের কথা বলবো।

. স্তনে চাকার মতো অনুভব :

এক নম্বর স্তনে চাকার মত হওয়া বেশির ভাগ মানুষ এই লক্ষণটাই সবার প্রথমে খেয়াল করেন। তারা দেখেন যে স্তনের একটা জায়গায় একটু চাকার মতো মনে হচ্ছে, একটা জায়গায় খানিকটা শক্ত হয়ে আছে বা স্তনের কোন একটা জায়গায় মনে হচ্ছে একটু ফুলে আছে। এমন হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন। তিনি আপনার স্তনটা পরীক্ষা করে দেখবেন যে আসলে এই ফুলে থাকা বা চাকার মতো শক্ত হয়ে জায়গাটা ক্যান্সারের কোন লক্ষণ কিনা।

২. স্তনের চামড়ায় পরিবর্তন আসা:

এই লক্ষণটা একটু ভালো করে খেয়াল করেন। কারণ এটা ধরতে পারা কিছুটা কঠিন। স্তনের চামড়াটা দেখতে আপনার কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে। যেমন- স্তনের চামড়া কুচকে গেছে বা আপনার কাছে মনে হবে আগের থেকে অন্যরকম হয়েছে। অথবা চামড়ায় র‌্যাশ বা ফুসকুরি হতে পারে, লালচে হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো স্তনের চামড়াটা দেখতে কমলার খোসার মতো মনে হতে পারে। এর কোনটা যদি আপনি দেখেন বা আপনার কাছে ,মনে হচ্ছে স্তনের চামড়ার রং অন্যরকম হয়েছে তাহলে অবশ্যই আপনি ডাক্তার দেখান।

৩. স্তনের আকার বা আকৃতি পরিবর্তন:

স্তনের ক্যান্সার হলে আগের তুলনায় বড় মনে হতে পারে অথবা আকৃতিটা দেখতে আগের মতো না অন্যরকম মনে হতে পারে। আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন এইটা ধরতে পারার জন্য আপনার স্তনের আকার বা আকৃতি কেমন ছিল সেটা আপনাকে জানতে হবে। এখন যদি আপনার পূর্বে আকার বা আকৃতির কথা মনে না থাকে তাহলে সেটা সঠিক ভাবে ধরতে পারবেন না। এই জন্য নিজে নিজের স্তনটা নিয়মিত পরীক্ষা করা বা খেয়াল রাখা। এতে করে আপনি আপনার স্তনের আকার বা আকৃতিটা ধরতে পারবেন। যদি দেখেন যে আপনার আপনার স্তনের আকার বা আকৃতি পরির্তন হয়েছে তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তার দেখানো উচিত।

৪. স্তনের বোটা থেকে তরল বের হওয়া:

এই লক্ষণটা আপনার স্তনের বোটার দিকে খেয়াল করবেন। আপনার স্তনের বোটা দিয়ে তরলা বা রক্ত বা পুচ পানির মতো ‍কিছু বের হয় এগুলো থেকে যদি দুর্গন্ধ থাকে তাহলে ভয় পাবেন না। এগুলোর বের হওয়া মানেই যে ক্যান্সার হয়েছে এমন না। কিন্তু স্তন ক্যান্সার একটা লক্ষণ হওয়ার ছোট সম্ভাবনা আছে তা একজন ডাক্তার দেখিয়ে নেয়াই ভালো। আর এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি কারণ এটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন জানতে চান যারা প্রেগনেন্ট বা গর্ভবতী নারী তাদের স্তনের বোটা থেকে অল্প একটু দুধের মত তরল বের হতে পারে। এটা স্বাভাবিক আর এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নাই। আর অন্যদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত বলে আমি মনে করি।

. বোঁটা বা বোঁটার আশেপাশে চমড়ায় পরিবর্তন: 

স্তনের বোঁটার আশেপাশের চামড়ায় পরিবর্তন আসা, যেমন- র‌্যাশ বা ফুসকুরি হতে পারে। একটু চোল্ডের মত পড়তে পারে বা লালচে হয়ে যেতে পারে অথবা চুলকাতে পারে। মোট কথা, স্তনের বোঁটা এবং আশেপাশের চামড়ায় কোন পরিবর্তন আসছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এইগুলো স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ। এই লক্ষণ অনেকটা দুই নম্বর লক্ষণের ন্যায়। যদি স্তনের বোঁটায় এই ধরনের লক্ষণ দেখেন তাহলে আগের ন্যায় ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

. স্তনের বোঁটার আকারে বা অবস্থানে পরিবর্তন আসা:

স্তনের বোঁটা ভেতরের দিকে চলে যেতে পারে। মনে হতে পারে যেন বোঁটা একদম স্তনের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে অথবা স্তনের বোঁটা দেখতে বা ধরতে পারছেন না। এটাও ‍কিন্তু ক্যান্সারের একটা লক্ষণ।

. বগলে অথবা গলার হাড়ের আশেপাশে ফোলা বা চাকা:

অনেকের স্তনে চাকা হলে সহজেই খেয়াল করেন, স্তনের বোঁটাটা যদি ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকে সেটাও তাড়াতাড়ি ধরে ফেলেন। কিন্তু এই যে বগলে বা গলার হাড়ের আশেপাশে ফোলা বা চাকা অনেকেই খেয়াল করেন না, তাই এটা একটু মাথায় রাখেতে হবে। আর এইসব জায়গায় যদি ফোলা বা চাকা বা শক্ত হয়ে থাকায় এরকম দেখা দেয় তাহলে একজন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

এই যে আমরা সাতটি লক্ষণ জানলাম, এইগুলো দেখা দিলেই যে ভাববেন স্তনে ক্যান্সার হয়েছে এমনটা না। কারণ এই লক্ষণগুলো ইনফেকশন, অ্যালার্জি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এরকম হতে পারে। তাই যে কোন একটা লক্ষণ দেখা দিলেই ঘাবড়ে যাবেন না, হয়তো দুশ্চিন্তা করার মতো কিছুই হয়নি। কিন্তু অল্প হলেও যেহেতু স্পন ক্যান্সার হবার একটা সম্ভাবনা আছে তাই অবশ্যই একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে নিবেন।

আচ্ছা একটা কথা খেয়াল করেছেন কি, আমি কিন্তু স্তনে ব্যথার কোন কথাই বলি নি। আসলে স্তনে ক্যান্সার হলে স্তন ব্যথা হয় না। স্তন ব্যথা হয় মাসিকের আগে আগে বা গর্ভাবস্থায় বা জন্ম নিরোধক বড়ি খেলে বা স্তনে ইনফেকশন হলে। মনে রাখবেন ক্যান্সার হলে সাধারণত স্তনে ব্যথা করে না। তবে স্তনে বা বগলে যদি একটানা ব্যথা হয় অর্থাৎ ওষুধ খেলেও ছাড়ছে না বা কমছে না তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কেননা একটানা ব্যথা হওয়া ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

আলোচনা- ডাক্তার তাসনিম জারা (ইংল্যান্ড)

নবীনতর পূর্বতন