সকল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জাপানিজ টেকনিক - Japanese technique to get good results in all exams


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় পাঠক। আজকের এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি এস, এস, সি/ এইচ, এস, সি কিংবা যেকোনো পরীক্ষায় 100% ভালো ফলাফল করবেন। আপনি যদি একজন ছাত্র বা একজন অভিভাবক হয়ে থাকে তাহলে েএই ব্লগটি মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ পড়ুন। কেননা আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো জাপানিজ ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ধরণ। কেননা জাপানিজ এই পদ্ধতিতে পড়াশোনা করলে আপনি অনেক ভাল ফলাফল করবেন। এখানে মোট ছয়টি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এবং এই পদ্ধতিতেই জাপানিজ ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে থাকে।

পড়াশুনায় বিশ্রাম:

প্রথম টেকনিকটি হলো স্টাডি ব্রেক বা পড়াশোনায় বিশ্রাম। আপনি কি জানেন জাপান এবং কোরিয়ার স্টুডেন্টরা  ক্লাসরুমের সম্পূর্ণ ফ্রিডম পেয়ে থাকে। অর্থ্যাৎ তাদের উপরে জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা সেখানকার শিক্ষকরা উপলবদ্ধি করে। আমাদের দেশে যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে ক্লান্তি বোধ করে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে শিক্ষকরা তাকে ঘুম থেকে জাড়িয়ে তুলে এবং ইচ্ছা মতো কথা শোনায় এবং শেষমেষ মারধরও করে।

কিন্তু জাপানে তার উল্টোটা হয়। সেখানে যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে তাদের শিক্ষকরা তাকে ঘুমাতে দেয়। কারণ তখন যদি তাকে জাগিয়ে তোলা হয় এবং পড়াশোনায় লাগিয়েও দেওয়া হয় তাহলে কোন লাভ নেয়। কেননা তখন তার পড়াশোনায় কোন মনোযোগ থাকবে না। তার মনোযোগ থাকবে কখন তার স্কুল ছুটি হবে এবং সে বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবে।

তাই আপনাকেউ নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর কোন কিছুই করতে হবে না। যদি কেউ আপনাকে জোর করে করতে বলে তাহলে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবে যে এটি সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। তাই যখন নিজেকে সবদিক থেকে পারফেক্ট মনে হবে ঠিক তখনই পড়াশোন করতে বসেন। আর তখন  দেখবেন পাঁচ ঘন্টার পড়াশোনা দুই ঘন্টায় শেষ।

প্রত্যেক বিষয়ে সমান গুরুত্ব দেওয়া:

মনে করে আপনার সামনে পরীক্ষা আর আপনার ফিজিক্স পড়তে একটুও ভালো লাগে না। তাই আপনি ফিজিক্স বাদ দিয়ে বা হালকা পাতলা ফিজিক্স পড়ে বাকি বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে পড়তে শুরু করলেন। কিংবা মনে করেন আপনার কাছে বাংলা খুবই সহজ লাগে তাই পরীক্ষার আগে বাংলা বাদ দিয়ে অন্যান্য কঠিন বিষয় গুলো লাগাতার পড়তে শুরু করলেন। এর ফলে যা হবে ঠিক ওই বিষয়েই আপনার নম্বর সব থেকে কম আসবে। আর পরীক্ষায় একটা বিষয় খারাপ হলে সেটির ইম্প্যাক্ট সবগুলো বিষয়ের উপরে পড়ে। যা আপনার রেজাল্ট এবং আপনার ভবিষ্যৎ দুটোর জন্যই ক্ষতিকর। আর এই সমস্যাটি দূর করতে জাপানের শিক্ষার্থীরা সবগুলো বিষয়ের প্রতি সমান গুরুত্ব দেয়। যা তাদের পড়াশোনায় একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ যে বিষয়টি আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে সে বিষয়টি আপনি যতটা আগ্রহ নিয়ে পড়েন ঠিক তেমনি যে বিষয়টি আপনার কাছে একটুও ভালো লাগে না সে বিষয়টিও ওই সমান পরিমান আগ্রহ নিয়ে পড়তে হবে। তাহলে দেখবেন রেজাল্টে আপনার ভালো একটা মার্ক আসবে।

একটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া:

এটি এমন একটি টেকনিক যা আপনি আগে কোথাও শোনেন নি। কিন্তু এই টেকনিকটি খুবই সিম্পল ও সোজা। আপনাকে যেটি করতে হবে, যে বিষয়টি আপনি পড়বেন শুধুমাত্র সেই বিষয়ের বই খাতা বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো পড়ার টেবিলে রাখবেন। বাকি অন্যান্য বিষয়ের সমস্ত সরঞ্জাম আপনাকে টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে করে যেটি হবে সেটি হলো আপনার ফোকাস শুধুমাত্র ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে থাকবে। ধরেন আপনি অংক করতে বসলেন তো আপনার পড়ার টেবিলে শুধুমাত্র অংক করার বই খাতা ক্যালকুলেটর ও জ্যামিতির বক্স ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। যার ফলে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে যাবে না। তারপর আপনি যখন পড়তে শুরু করবেন তখন মনোযোগ সহকারে বিশে থেকে পঁচিশ মিনিট ভালোভাবে পড়াশোনা করেন তারপর উঠে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের একটি ব্রেক নিন এবং একটু হাঁটা চলা করেন। পাঁচ থেকে ছয় বার এই সার্কেলটি মেনে চললে নিমিষে দেখবেন আপনার দুই ঘন্টা পড়া শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনি যদি এই টেকনিক অবলম্বণ না করে পড়েন তাহলে একটানা পড়ার টেবিলে বসে থাকতে থাকতে আপনার বিরক্ত লাগবে। এবং মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই পড়তে বসলেই টেকনিটটি অবলম্বণ করার চেষ্টা করেন।

অন্য কাজ থেকে বিরত থাকা:

এই টেকনিকটি হচ্ছে এক সাথে কয়েকটি কাজ না করা। এক সাথে কয়েকটি কাজ না করে আপনাকে শুধুমাত্র একটি কাজ ফোকাসের সাথে করতে হবে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে অভ্যস্ত। কারো কারো মতে এতে অনেকটা সময় বেঁচে যায়। কিন্তু তার বিপরীতে বরং আপনার ফোকাস আর কনসেন্ট্রেশন নষ্ট হয়। আপনি হয়তো জানেন না, যে বর্তমানে আমাদের কনসেন্ট্রেশন টাইম পিরিয়ড মাত্র আট সেকেন্ড। অর্থাৎ আমরা আট সেকেন্ডের বেশি কোন বিষয়ের উপরে কনসেন্ট্রেট করতে পারি না। আট সেকেন্ড পরেই আমাদের ব্রেইন এটা ওটা ভাবতে শুরু করে। আর তাই ভুলেও একসাথে কয়েকটি কাজ করা যাবে না। আপনি হয়তো চা খেতে খেতে বই পড়ছেন, আপনার মনে মনে হতে পারে এতে আপনার রিফ্রেশমেন্ট বাড়বে এবং পাশাপাশি পড়াটাও হবে।

কিন্তু শর্তটা হলো সেই সময় আপনি যে পড়াটুকু পড়বেন তার কোন মূল্যই থাকবে না। কারণ আপনি পড়ছেন ঠিকই কিন্তু আপনার মাইন্ড ভাবছে আবার কখন চায়ের কাপে চুমুক দিবেন। কেননা আপনি হয়তো ভাববেন চায়ে চিনি কম হলো নাকি বেশি হলো বা চা এখনো গরম আছে কিনা ইত্যাদি।

কি অবাক হলেন? শুনে অবাক হওয়ারই কথা। কারণ এতদিন তো এটাই করে এসেছি। তাই পড়াশোনা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজ করার সময় আপনে সমস্ত কিছু ফেলে রেখে শুধুমাত্র এই কাজের প্রতি ফোকাস রাখতে হবে।

যেকোনো একটি কাজ করুন:

আপনার ফোকাসকে চেঞ্জ হতে দিয়েন না। যখন আপনি কোন কাজ করা শুরু করেন তখন সেটি শেষ করার আগেই অন্য আরেকটি কাজের কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে। আর আপনি নিজের বর্তমান কাজটি শেষ না করেই সেই কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করেন বা সেটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেন। আপনার যদি মনে হয়ে থাকে যে আপনি একসাথে দুটি কাজের উপরে ফোকাস দিতে পারবেন তাহলে সেটা আপনার ভুল ধারণা। কারণ মানুষ কখনোই দুটো কাজে একসাথে মনোযোগ দিতে পারে না। তাই ভুল করেও কখনো একসাথে দুটো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে যাইয়েন না। পড়ালেখা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে আপনার ফোকাস শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপরে থাকতে হবে।

একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস সূর্যের আলোকে কেন্দ্রভূত করে আগুন ধরাতে পারে। তেমনি আপনার ফোকাসই আপনার জীবনে আগুন জ্বালাবে। তাই নিজের ফোকাসকে কখনো নষ্ট হতে দিয়েন না।

ছোট ছোট কাজকে গুরুত্ব দেওয়া:

মানুষ সচরাচর সারাদিনের ডেইলি লাইফের সবচেয়ে বড় টাস্ককে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে আর ছোট ছোট কাজগুলো তেমন কোনো গুরুত্বই তাদের কাছে থাকে না। কিন্তু জাপানিদের কাছে ব্যাপারটা পুরোপুরি উল্টো। তাদের কাছে দিনের সবচেয়ে বড় কাজটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ দিনের সবচেয়ে ছোট সহজ কাজটাও তাদের কাছে ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে তাড়াতাড়ি কলেজে পৌঁছে পরীক্ষায় উপস্থিত হতে হবে। অর্থাৎ পরীক্ষায় উপস্থিত থাকা আপনার কাছে বড় একটি কাজ। কিন্তু জাপানিদের কাছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি নিরাপদভাবে কলেজে পৌঁছানো ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ঠিকমত কলেজে পৌঁছাতে না পারেন কিংবা কোন দূর্ঘটনার শিকার হন তাহলে তো পরীক্ষাটাই দেওয়া হলো না। তাই বড় বড় কাজগুলো করতে গিয়ে ছোট কাজগুলোর যে অমূল্যায়ন অবহেলা আপনি করছেন যে খামখেয়ালি ভাবে আপনি চলাফেরা করছেন সেটি আপনার জন্য মারাত্নক বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর যখন আপনি আপনার ছোট ছোট কাজগুলো মনোযোগ দিয়ে করতে পারবেন তখন দেখবেন ধীরে ধীরে বড় কাজগুলোতেও আপনার ফোকাস দিনদিন বাড়তে শুরু করবে। তাই ছোট ছোট কাজগুলোকে হালকা ভাবে না নিয়ে সেগুলোকেও যথার্থ গুরুত্ব সহকারে করতে শিখেন। ঠিক তেমনি ভাবে আপনার পড়াশোনায় এই ভাবে ছোট ছোট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিন।

আশা করি এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে পড়াশোনা করুন তাহলে 100% ভালো ফলাফল করেন।

নবীনতর পূর্বতন